সোমবার, ০৭ Jul ২০২৫, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
সংবাদ শিরোনাম :
আবনায়ে ক্বাদিম সাকিতপুর মাদরাসার কমিটি গঠন জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল নব্য ফেরাউনের বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণ: ইউকে জমিয়ত সমাজ ও রাষ্ট্রের দুষ্টচক্রকে নির্মূল করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজা-উন-নবী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা জমিয়তের প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জমিয়তের হেভিওয়েট প্রার্থী হাফিজ মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ দিরাই পৌরসভার বাজেট পেশ সুনামগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় মাদকের চালান আটক দিরাইয়ের সেনা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার ৪, গুলিতে নিহত নিরীহ আবু সাইদ হেফাজতে ইসলাম মিডল‍্যান্ডস শাখা গঠন: সভাপতি মাওলানা এখলাছুর রহমান, সেক্রেটারী মাওলানা এনামুল হাসান সাবীর লন্ডন মহানগর জমিয়তের ঈদ পুনর্মিলনী ও কার্যনির্বাহি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
এক গলিকে দু’গলি করে গড়ে উঠেছে দু’শতাধিক অবৈধ দোকানকোটা

এক গলিকে দু’গলি করে গড়ে উঠেছে দু’শতাধিক অবৈধ দোকানকোটা

jamalgonj-pic-2বাপ্পী বর্মন, জামালগঞ্জ সংবাদদাতা: সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে সুরমা নদীর নৌ-রুটকে কাজে লাগিয়ে স্বাধিনতার পূর্ব থেকেই গড়ে উঠে জেলার আরেক অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাচনা বাজার। শুধু জামালগঞ্জ নয়, এর আশপাশের কয়েকটি উপজেলা হাওরঘেষা হওয়ায় দিনে দিনে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটে সাচনা বাজারে। এক সময় সাচনা বাজার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলেও কালের পরিক্রয়ায় সেই সাচনা বাজার এখন হাজারো মানুষের দূর্ভোগ আর দুর্গতির হাট হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে। আর এ দুর্ভোগ ও দুর্গতির কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে গত দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে বাজারের মেইন রোডে গড়ে উঠা দু’শতাধিকের উপর ভাসমান দু’সারির দোকানকোটা।
অভিযোগ রয়েছে, কয়েক শ্রেণির প্রভাবশালী চক্র ওই সকল দোকানকোটার পজিশন ধরিয়ে দিয়ে হকারদের নিকট থেকে আগাম হিসাবে প্রতিটি দোকানের বিপরীতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেয়ার পাশাপাশি ভাড়[া হিসাবে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। ১/১১-এর সময় এক গলিকে বিভক্ত করে দু’গলিতে রূপান্তরিত হওয়া ওইসব দোকান কোটা উচ্ছেদ করা হলেও পরবর্তীতে দখলদার চক্র সেই আগের অবস্থানেই রয়ে গেছেন। ওইসব দোকানকোটা উচ্ছেদ ও উচ্ছেদ ঠেকানোর দলে থাকা সুবিধাভোগীরা বছরের পর বছর ধরে প্রশাসনের সাথে সাপ-লুডু খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সরেজমিন সাচনা বাজার গেলে ভোক্তভোগী সাধারণ লোকজন, স্কুল-কলেজে যাতায়াতকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বাজারের ব্যবসায়িরা এ প্রতিবেদকের নিকট তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরতে গিয়ে ওই সব তথ্য প্রদান করেছেন।
সরেজমিন জেলার এ বৃহৎ হাট ঘুরে দেখা যায়, জেলা সদর থেকে চারচাকার যানবাহননের প্রবেশ দ্বার সিএনন্ডবি রোডের মুখ থেকেই সরু গলির দু’পাশের দোকানকোটা মধ্যবাজার হয়ে দক্ষিণে লঞ্চঘাট পর্যন্ত এক গলিকে দু’গলিতে ভাগ করে মাঝখানে বসানো হয়েছে চা-পান, জুতা, কাপড়, মনোহারি, ফলমুল-শাকসবজিসহ প্রায় দু’শতাধিক অস্থায়ী দোকানকোটা। ওইসব দোকানকোটার কারণে গলির সরু রোড দিয়ে সিএনজি, লাইটেস, প্রাইভেট কার, রিক্সা, মোটর সাইকেল প্রবেশ করতেই পারেনা। সেই সাথে বাজারের ভেতর থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পণ্যবাহি ট্রাক প্রবেশ তো দূরের কথা, সাধারণ পথচারী নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীরাও চলাচল করতে গিয়ে গায়ে ধাক্কা সামলাতে অনেক সময় বিপাকে পড়ে যান। বাজারের সার ডিলার আলাল মিয়া বলেন, পণ্যবাহি ট্রাক, যানবাহন প্রবেশ তো দূরের কথা, সাধারণ লোকজনও ফুটপাতের দোকান কোটার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্রী জানান, সাচনা বাজার হয়ে খেয়া নৌকা পারি দিয়ে প্রতিনিয়ত কলেজে আসা যাওয়া করতে হয়, বাসা থেকে খেয়াঘাট যেতে যেখানে ১০ মিনিট সময় লাগার কথা না, সেখানে গলি পার হতেই আধা ঘণ্টা লেগে যায়। ওই ছাত্রী আরো বলেন, অনেক সময় দেখা যায় আমার মত স্কুল-কলেজ পড়–য়া হাজারো শিক্ষার্থী ফুটপাতের দোকানকোটার কারণে লোকজনের গাঁ ঘেষেই চলাচল করতে গিয়ে লজ্জায় পড়ে যায়।
জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, সাচনা বাজারের ওই ফুটপাতের দোকানকোটা জন্য শুধু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীই নয়, বাজারে আসা সাধারণ ক্রেতাদেরও হাটতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওইসব দোকানকোটা উচ্ছেদের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও কয়েকটি স্বার্থান্বেশী মহল তাদের স্বার্থে সংগঠন করে বার বার উচ্ছেদ অভিযানকে বাধাগ্রস্থ করেই যাচ্ছে।
অপরদিকে সাচনা বাজার-বেহেলী রোডের অবস্থা আরো বেগতিক। দু’সারির দোকান কোটার সামনে কয়েকটি ওয়ার্কশপের নির্মাণ সামগ্রী ও মেরামত যোগ্য নয় এমন কিছু সেলু মেশিন, ট্রাক্টর ফেলে রাখা হয়েছে।
এদিকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় মুখে কুলুপ এঁটে রাখা ফুটপাতে বসা দোকানীরা আগাম টাকা দেয়া ও প্রতিমাসে ভাড়া প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার করলেও এদের কেউ কেউ জানান, ভাসমান চালি সমিতির নামে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পূর্ণ:বাসন করার কথা বলে একটি মহল বাজারের খাস ভূমিতে ভিট পাইয়ে দেবার নামে গত ক’বছর পূর্বে কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন। ভাসমান ব্যবসায়ীদের পূর্ণ:বাসনের নামে সাচনাবাজার নিউ মার্কেটে ৪০টির অধিক দোকানকোটা গড়ে উঠলে হাতে গোনা ক’জন ভাসমান ব্যবসায়ী ভিট পেয়ে তা বিক্রি করে দিয়েছেন, আর অধিকাংশ ভিটা পেয়েছেন এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের লোকজন।
সাচনা বাজার ভাসমান চালি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া বলেন, প্রশাসন আমাদেরকে রাস্তা পরিষ্কারের কথা বলেছেন, আমাদেরকে একটু সময় দিতে হবে। অতীতে এভাবে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে সংগঠনের নামে প্রশাসনকে জিম্মি করে কতবার সময় নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা আহমেদ পলি সোমবার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকে বলেন, উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের মাধ্যমে মাইকিং করে সর্বশেষ সময় জানিয়ে দেয়া হয়েছে ভাসমান দোকান কোটা সরিয়ে নেয়ার জন্য। তিনি আরো বলেন, নির্ধারিত সময়ের পর কেউ যদি তার অবৈধ দোকান কোটা না সরায়, তাহলে বাধ্য হয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com